চাঁদপুর সেচ প্রকল্প থেকে জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বিস্তীর্ণ জনপদে ক্ষত চিহ্ন রেখে যাচ্ছে। নিচু এলাকার বসতবাড়ি টানা কয়েকদিন জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ায় তাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এসব বাড়িঘরে অনেকে ফিরে আসলেও এখন সেগুলোতে বসবাসের পরিবেশ নেই।
চাঁদপুরে জলাবদ্ধতার ক্ষত চিহ্ন, বেড়েছে জনদুর্ভোগ
কারণ, ঘরের ভিটা পানিতে নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসবাবপত্রেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমন দুর্ভোগে পড়া মানুষদের একজন হচ্ছেন আব্দুর রহমান হাওলাদার (৫৫)। চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে বেড়িবাঁধ লাগোয়া এলাকায় তার বাড়ি। স্ত্রী তৈয়বুন নেছা আর ৪ সন্তান নিয়ে আব্দুর রহমান হাওলাদারের পরিবার।
গত ২৩ আগস্ট তার বসতঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক কাপড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নেন অন্যত্র। ১০ দিন পর পানি কমা শুরু করলে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। কিন্তু ঘরের ভেতর বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ। কাদা-পানিতে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।

এমনকি চুলাতে রান্না করারও উপায় নেই। বাধ্য হয়ে আব্দুর রহমান হাওলাদার-তৈয়বুন নেছা শুকনো খাবার খাচ্ছেন। গত দুদিন এভাবেই চলছে। তবে তাদের সন্তানরা এখনো বাড়ি ফেরেনি। কৃষক আব্দুর রহমান হাওলাদার জানালেন, শুধু বসতঘরই নষ্ট হয়নি।
৩০ শতক জমিতে লাগানো আমনের ক্ষেতও শেষ। এরইমধ্যে কিছু খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু বসতঘর মেরামত এবং নষ্ট হওয়া ক্ষেতের ফসলের কী হবে? এমন প্রশ্ন ছিল জলাবদ্ধতায় ক্ষতির মুখে পড়া এই কৃষকের। শুধু এমন একজন কৃষকই নয়, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের হাজারো মানুষের সেই একই দুর্ভোগ। টানা ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়নি কেবলমাত্র নিচু এলাকার বসতবাড়ি, রোপা আমনের ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছও।
চাঁদপুর সদরের বাগাদী, সাপদী, কমলাপুর, বালিয়া, বাখরপুর, বাংলাবাজার, হাইমচরের উত্তর আলগী ও দক্ষিণ আলগী, ফরিদগঞ্জের ধানুয়া, ভাটিয়ালুর, চির্কা, গাজীপুর, কেরোয়া, শাহাপুর, সাফুয়া, পোয়া, রামপুর চর, হর্ণি দূর্গাপুর, সাহেবগঞ্জসহ আরো শতাধিক গ্রামের জলাবদ্ধতায় ডুবে ছিল। এখন এসব এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে।
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন এবং ৩ হাজার হেক্টর অন্যান্য সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শাফায়েত সিদ্দিকী জানান, এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হয়েছে।

তাদেরকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তাও জানালেন একই কথা। বাদ পড়েনি আধাপাকা রাস্তাঘাট। ভেঙে যাওয়া এসব রাস্তা দিয়ে ছোটখাটো যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। পানির তোড়ে কোথাও ভেঙে গেছে। আবার জলাবদ্ধতায় পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে পাকা রাস্তার পিচ।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, এবারের বন্যা এবং জলাবদ্ধতায় ৮ উপজেলায় কৃষি, মৎস্য, সড়কসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ৩ শ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। আর গোটা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ১০০ কিলোমিটার ভেতরে।
আরও পড়ুন: