আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় চাঁদপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত. চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২৩°০০´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩২´ থেকে ৯১°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে চাঁদপুর জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে কুমিল্লা জেলা, মেঘনা নদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলা ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে মেঘনা নদী, মুন্সীগঞ্জ জেলা, শরীয়তপুর জেলা ও বরিশাল জেলা। পদ্মা ও মেঘনা নদী দুটি চাঁদপুর শহরের কাছে এসে মিলেছে।

চাঁদপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে এ জেলা অবস্থিত। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর” নামে ডাকা হয়। এছাড়া চাঁদপুর নদী বন্দর হিসাবে সুখ্যাত চাঁদপুরকে এককালে “গেট ওয়ে অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া” বলা হতো।
চাঁদপুরের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
চাঁদপুরে থাকা অসংখ্য বিখ্যাত ব্যক্তি এই জেলাকে অন্যান্য জেলার তুলনায় আলাদা এক চমক দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী জনাব ডাঃ দীপু মনি মেডামের বাসাও কিন্তু চাঁদপুরে!
- বর্তমান মাননিয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি – তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন।
- মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর – তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন।
- মাননীয় সংসদ সদস্য (১ নং সেক্টর কমান্ডার) – মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম – বীর উত্তম।
- ড. অধ্যাপক সামছুল আলম স্যার – মাননীয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
- লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী – বীর মুক্তিযোদ্ধা (৮ নং সেক্টর কমান্ডার)।
- পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর সাবেক মহাপরিচালক – ডাঃ কাজী মোস্তফা সারোয়ার।
- জনাব মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন – একজন লেখক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এর দায়িত্ব পালন করেছেন।
- জনাব ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী – পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য প্রশাসন (সচিব )।
- শাইখ সিরাজ – চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান এবং জনপ্রিয় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
- এসডি রুবেল – নন্দিত সংগীত শিল্পী।
- জনাব গোলাম হোসেন – জাতীয় রাজস্ব বিভাগ NBR এর সাবেক চেয়ারম্যান।

চাঁদপুর জেলা দর্শনীয় স্থান
হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর মাজার
হযরত শাহরাস্তির মাজার বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। হযরত শাহরাস্তি ছিলেন একজন সুফি সাধক এবং দরবেশ। তিনি ১৫ শতকে ভারতের তুঘলক রাজবংশের আমলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। পরে তিনি চাঁদপুর জেলায় আসেন এবং এখানেই তার মৃত্যু হয়। হযরত শাহরাস্তির মাজারটি একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান। এটি চাঁদপুর জেলার অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনার্থীদের আকর্ষণ।
মাজারটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়তে এবং হযরত শাহরাস্তির মাজার জিয়ারত করতে আসেন। মাজারটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন। এটি একটি উঁচু বেদির উপর অবস্থিত। বেদিটি চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মাজারটিতে একটি সুন্দর গম্বুজ এবং একটি ছোট মিনার রয়েছে। মাজারের ভেতরে হযরত শাহরাস্তির সমাধি রয়েছে। সমাধিটি একটি সুন্দর কারুকার্য করা মার্বেল পাথরের তৈরি। সমাধির চারপাশে বিভিন্ন ধরনের বাতি ও মোমবাতি জ্বালানো হয়।
রূপসা জমিদার বাড়ি
রূপসা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামে অবস্থিত। এটি ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন আহম্মদ রাজা। তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে নিয়ে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। রূপসা জমিদার বাড়িটি ইট দিয়ে তৈরি। জমিদার বাড়িটির মূল ভবনটি তিনতলা বিশিষ্ট। মূল ভবনের সামনে একটি বড় পুকুর আছে। পুকুরের চারপাশে ঘাট আছে। জমিদার বাড়ির ভিতরে রয়েছে একটি মসজিদ, একটি কবরস্থান এবং কিছু আবাসিক ভবন। রূপসা জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত।
হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ (বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম)
হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি আয়তনের দিক দিয়ে উপমহাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ মসজিদ। এর আয়তন প্রায় ২৮,৪০০ বর্গফুট। মসজিদটিতে একসাথে প্রায় ১০,০০০ মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটি বর্গাকার আকৃতির। এর চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে। প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ১৮৮ ফুট। মসজিদের ভেতরের ছাদটি লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি এবং উপরে টাইলস লাগানো। মসজিদের দেয়ালে বিভিন্ন নকশা করা আছে।
লোহাগড়া মঠ
লোহাগড়া মঠ বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মঠ। এটি প্রায় চার থেকে সাত শতাব্দী পুরাতন প্রাচীন এই মঠ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাশে অবস্থিত। যা লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা তৈরি করেছিলেন। লোহাগড়া মঠটি তিনটি অংশে বিভক্ত: একটি বড় মঠ, একটি ছোট মঠ এবং একটি মাটির নিচের গহবর। বড় মঠটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। এটি আয়তাকার আকৃতির এবং এর উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। মঠের দেয়ালে বিভিন্ন নকশা করা আছে। ছোট মঠটি বড় মঠের পাশে অবস্থিত। এটিও আয়তাকার আকৃতির এবং এর উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। মাটির নিচের গহবরটি মঠের পিছনে অবস্থিত। এটি প্রায় ১০০ ফুট গভীর। গহবরটিতে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন এই লোহাগড়া মঠ বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত।
- বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র, বড়স্টেশন মোলহেড বা তিন নদীর মোহনা (চাঁদপুর সদর)
- মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড
- টরকী বকুল তলা
- ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র
- মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুর
- ধানুয়া মিনি হাওর (ধানুয়া-গাজীপুর ব্রিজ)
- লোহাগড় মঠ
- লোহাগড় জমিদার বাড়ি
- শোল্লা জমিদার বাড়ি
- বলাখাল জমিদার বাড়ি
- বড়কুল জমিদার বাড়ি
- বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি
- কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি
- লুধুয়া জমিদার বাড়ি
- গজরা জমিদার বাড়ি
- হামিদ মিয়া জমিদার বাড়ি
- চৌধুরী বাড়ি
- সাহাপুর রাজবাড়ি
- অঙ্গীকার স্মৃতিসৌধ
- রক্তধারা স্মৃতিসৌধ
- ইলিশ চত্বর
- শপথ চত্বর
- শহীদ রাজু ভাস্কর্য
- ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য
- দীপ্ত বাংলা (মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য)
- বখতিয়ার খান মসজিদ
- আলমগীরী মসজিদ
- শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ
- চাঁদপুর বন্দর
- চাঁদপুর সরকারি কলেজ
- তুলাতুলী মঠ
- নাওড়া মঠ
- মঠখোলার মঠ
- যাত্রা মুনির মঠ
- সত্যরাম মজুমদারের মঠ
- পর্তুগীজ দুর্গ, সাহেবগঞ্জ
- দুর্লভ জাতের নাগলিঙ্গম গাছ (জেলা প্রশাসক বাংলো)
- ফাইভ স্টার পার্ক
- জজ নগর (Judge Nagar) শামীমা রাতুল শিশু পার্ক ও মিনি জো (পৌর পার্ক)।
- বোটানিকাল গার্ডেন
- মত্স্য জাদুঘর
- শিশু পার্ক
- গুরুর চর
- সোলেমান শাহ-এর মাজার
- কালীবাড়ী মন্দির
- মনসা মুড়া
- মেঘনা নদীর তীর
- রাগৈ মুঘল আমলের ৩ গম্বুজ মসজিদ
- শাহ সুজা মসজিদ
- রামচন্দ্রপুর বড় পাটওয়ারী বাড়ী (ডাকাতিয়া নদী সংলগ্ন)
- সাচার রথ
- কাটাখালী লঞ্চ টার্মিনাল।
- পশ্চিম লাড়ুয়া বড় ভূঁইয়া বাড়ী, রামপুর বাজার, ফরিদগঞ্জ

চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবার
চাঁদপুর জেলা তার সুস্বাদু খাবার এবং ঐতিহ্যবাহী রান্নার জন্য বিখ্যাত। চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে-
ইলিশ মাছ
চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ইলিশ মাছ। চাঁদপুর জেলাটি ইলিশের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল। চাঁদপুরে বিভিন্নভাবে ইলিশ মাছ রান্না করা হয়, যেমন ভাজা, ঝোল, মালাইকারি, কাবাব, চচ্চড়ি ইত্যাদি।
রসগোল্লা
চাঁদপুরের আরেকটি বিখ্যাত খাবার হলো রসগোল্লা। চাঁদপুরের রসগোল্লার স্বাদ অতুলনীয়।
চিতই পিঠা
চাঁদপুরের চিতই পিঠাও বেশ বিখ্যাত। চিতই পিঠার সাথে চাঁদপুরের বিভিন্ন রকমের ঝোল, যেমন ইলিশ মাছের ঝোল, মাংসের ঝোল, ডালের ঝোল ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়।
চমচম
চাঁদপুরের চমচমও বেশ জনপ্রিয়। চাঁদপুরের চমচম তৈরি হয় দুধ থেকে।
পায়েস
চাঁদপুরের পায়েসও চমচমের মতই বেশ সুস্বাদু। এই পায়েস তৈরি হয় নারিকেলের দুধ, চিনি এবং এলাচ দিয়ে।
এছাড়াও, চাঁদপুরের আরও কিছু বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে: মালাইকারি, কাঁচা মরিচের ভর্তা উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুূনঃ
2 thoughts on “চাঁদপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত”